খাবার খাওয়ার সময় এবং পরিমাণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কখন খাবার খাওয়া হচ্ছে। পুষ্টিবিদদের মতে, দুপুর এবং রাতের খাবারের মধ্যে অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার ব্যবধান রাখা উচিত। এর ফলে বিপাক হার, হজমশক্তি এবং শরীরের পুষ্টিগুণ শোষণ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।
কেন এই ব্যবধান জরুরি?
খাবার খাওয়ার পর আমাদের শরীরে তা হজম হতে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়া শরীরের জন্য জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। তাই দুপুর এবং রাতের খাবারের মধ্যে একটি সঠিক ব্যবধান রাখা জরুরি। পুষ্টিবিদ ইন্দ্রাণী ঘোষ বলেন, “দুপুরের খাবার খাওয়ার পর সেটি হজম করতে কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। এরপর বিকেলে হালকা স্ন্যাক্স বা চা খাওয়ার পর রাতের খাবার খাওয়া উচিত। সঠিক ব্যবধান না থাকলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
যতটুকু সময় পেটের মধ্যে খাবার হজম হতে লাগে, ততটুকু সময় পরে আবার খাবার গ্রহণ করলে তা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেকেই রাতে বেশি পরিমাণ তেল-মশলা খাবার খেয়ে থাকেন, যা হজমে দীর্ঘ সময় নেয়ার কারণে পেটফাঁপার মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এই ব্যবধানের উপকারিতা কী?
১) ক্যালোরির সঞ্চয় কমে যায়:
যদি দু’টি খাবার একে অপরের কাছাকাছি খাওয়া হয়, তাহলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে যেতে পারে, যা স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, সঠিক ব্যবধানের ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে না এবং বিপাক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চলতে থাকে।
২) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে:
খাবার খাওয়ার মাঝে পর্যাপ্ত সময় দিলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না। এ কারণে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়।
৩) হজমে সুবিধা হয়:
খাবার হজম হতে সময় লাগে, এবং এই প্রক্রিয়া পেটের মধ্যে চলতে থাকে। যদি খাবার খাওয়ার মধ্যে বেশি সময়ের ব্যবধান থাকে, তাহলে হজম ভালো হয় এবং পেটফাঁপার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
খাবারের সঠিক সময় নির্ধারণ কীভাবে করবেন?
যারা সাধারণ ৯টা-৫টা চাকরি করেন, তাদের জন্য খাবারের সময় নির্ধারণ করা তুলনামূলক সহজ। পুষ্টিবিদেরা পরামর্শ দেন, যদি দুপুরে খাবার খাওয়ার সময় ঠিক থাকে, তবে রাতের খাবারের সময় ৬-৭ ঘণ্টার ব্যবধান রেখে সেটি নির্ধারণ করা উচিত।
এক কথায়, প্রতিদিনের খাবারের সময় পরিকল্পনা করা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের পরিমাণের চেয়ে খাবারের সময় নিয়ন্ত্রণ করা শরীরের জন্য বেশি উপকারী।
এবার আপনার খাবারের সময় পরিকল্পনা করে দিন, যাতে সুস্থ, সুন্দর জীবন উপভোগ করতে পারেন।