---Advertisement---

‘মরতে হলে চাপা পড়ে মরব’! বেপরোয়া বহু হেলা বাড়ির বাসিন্দাই

---Advertisement---

কলকাতার বহুতল ও গৃহনির্মাণের এক বিরক্তিকর সমস্যা সামনে এসেছে। গত কিছুদিন আগে নেতাজিনগরের একটি বহুতল পাশের বাড়ির উপরে হেলে পড়ার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে শহর জুড়ে। কিন্তু তেমন বিপদের মুখে পড়েও, বহু পরিবারকে দেখা যাচ্ছে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে না যেতে। তাদের ধারণা, ‘মৃত্যু হলে চাপা পড়ে মরব, কিন্তু বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’ সেগুলি ছিল বাড়ির নির্মাণের গাফিলতির কারণে হেলে পড়া বাড়ি। এমন অবস্থায়, যথেষ্ট বিপদের মুখে এসে, তারা কিছুতেই তাদের বাসস্থান ছাড়তে প্রস্তুত নন।

বহুতল ভাঙার জন্য কী প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?

নেতাজিনগরের দুর্ঘটনার পর, যেখানে একটি নতুন বহুতল পাশের বাড়ির ওপর হেলে পড়ে, সেখানে পুরসভা জানায়, ভবন সোজা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। মণিকতলা এলাকার একটি বাড়ি ২০০১ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং সেখানকার বাসিন্দাদের দাবি, নতুন একটি ভবন নির্মাণ শুরু হওয়ার পর থেকেই তাদের বাড়িটি হেলতে শুরু করেছে। এই সমস্যাটি শুধু নেতাজিনগরে বা মণিকতলায় নয়, পুরো শহরের বহু জায়গাতেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বাসিন্দাদের ভয়াবহ চিত্র

একটি বাড়ির বাসিন্দা দীপালি চক্রবর্তী জানান, ‘এই বাড়ির ফ্ল্যাট তারা ২০০১ সালে কিনেছিলেন এবং ২০০২ থেকে এখানে বসবাস শুরু করেন। পাশের জমিতে বহুতল নির্মাণের কাজ শুরু হলে, তাদের বাড়ির ভেতরে একটি অবর্ণনীয় ঝাঁকুনি অনুভূত হয়।’ বিশেষ করে, নেতাজিনগরের ঘটনার পর, তিনি এ বিষয়ে বেশ শঙ্কিত। তবে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ভাবছেন না তিনি। তাঁর মতে, ‘মরতে হলে চাপা পড়ে মরব, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই।’

গার্ডেনরিচে আরও বিপদজনক ভবন

এরকম ভয়ঙ্কর বিপদ শহরের অন্যান্য এলাকাতেও রয়েছে। গার্ডেনরিচে, যেখানে সম্প্রতি একটি বহুতল ভেঙে পড়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানেও বহু হেলা বাড়ির বাসিন্দারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন। পুরসভা পরিদর্শন করতে এসে জানতে পারে যে, এখানেও একাধিক বাড়ি হেলছে এবং দুই বাড়ির মাঝে পাঁচ ফুট দূরত্ব নেই, ফলে এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে চলে যাওয়া সম্ভব।

প্রোমোটারের সাফাই

প্রোমোটাররা দাবি করেন, ‘বাড়ি ভাঙতে গেলে নিরাপত্তা আগে প্রয়োজন, তবে বাসিন্দারা যদি বিপদ বুঝতে পারেন, তারা নিজে থেকেই বাড়ি খালি করে দেবেন।’ গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়া বহুতলের আশপাশের বাড়ির প্রোমোটার ওয়াসিম, যাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল, তাঁর ভাই মহম্মদ জ়াহির বলেন, ‘এ শহরে বাড়ির অভাব রয়েছে। মানুষ রাস্তায়, টালির ঘরে বসবাসের বদলে, হেলানো বাড়িতেও থাকতে চান।’

মানিকতলা ও শিবতলা লেনের ইতিহাস

কলকাতার তিলজলা শিবতলা লেনের ১২/১১ নম্বর পাঁচতলা বাড়ি প্রায় এক বছর ধরে পাশের ১২/১২ নম্বর বাড়ির গায়ে হেলে ছিল। যদিও পুরসভা বাড়িটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে প্রোমোটারের দাপটের সামনে তারা তা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত বাড়িটি ভাঙলেও, সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘তারা হেলানো বাড়িতে ভালো ছিলেন, কিন্তু বাড়ি ভেঙে দেওয়ায় তাদের ৩২টি পরিবার রাতারাতি ঘরছাড়া হয়ে গিয়েছিল।’

কলকাতা পুরসভার অবস্থান

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘কাউকে ঘরছাড়া করার উদ্দেশ্য আমাদের নেই। তবে দয়া করে বেআইনি কিছু করবেন না।’ কিন্তু এই শর্তে, তার পরামর্শ কার্যকর হবে কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

কোলকাতার মতো শহরে বাসিন্দাদের জীবন এমন সংকটপূর্ণ জায়গায় চলে যাওয়ার পরও কেন তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে চান না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Join WhatsApp

Join Now
---Advertisement---

Leave a Comment

Read all the Breaking News Live on indiatvnews.com and Get Latest English News & Updates from Education and Higher Studies Section