মহাকুম্ভ ২০২৫ আসছে ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫-এ। এই সময় প্রয়াগরাজ-এ শুরু হবে কুম্ভ মেলা, যেখানে লাখ লাখ ভক্ত, সাধু, এবং তীর্থযাত্রী সমবেত হয়ে পবিত্র ত্রিবেণী সঙ্গম নদীতে স্নান করবেন। তবে, এই কুম্ভ মেলা এর উত্থান কিভাবে হয়েছিল? আজকের এই লেখায় জানব কুম্ভ মেলার পৌরাণিক ইতিহাস এবং এটি কিভাবে একটি দেবতার ভুল থেকে শুরু হয়েছিল।
কুম্ভ মেলার পৌরাণিক উত্থান
কুম্ভ মেলা এর শুরুর সাথে সম্পর্কিত কাহিনিটি সামুদ্র মন্থন (Ocean Churning) এর পৌরাণিক কাহিনির মধ্যে নিহিত। এই কাহিনি বিষ্ণু পুরাণ, কুর্ম পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ এবং ভাগবত পুরাণ-এ পাওয়া যায়। তবে, বেশ কিছু বিশেষ গল্পও প্রচলিত রয়েছে যা কুম্ভ মেলার জন্মের কারণ ব্যাখ্যা করে। বিশেষ করে, চন্দ্র দেবতার ভুল থেকে এই উৎসবের উদ্ভব হওয়ার একটি জনপ্রিয় কাহিনী রয়েছে।
চন্দ্র দেবতার ভুল
এই পৌরাণিক কাহিনির অনুসারে, দেবতারা ও অসুররা একত্রে সামুদ্র মন্থন করছিলেন, যেখানে তারা অমৃত (অমৃত) সংগ্রহ করার চেষ্টা করছিলেন। এই মন্থন থেকে ১৪টি রত্ন বেরিয়ে আসে, যার মধ্যে অমৃত পাত্র ছিল সবচেয়ে মূল্যবান। এরপর দেবতারা এবং অসুরদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয় এই অমৃত নিয়ে।
পাত্রটি রক্ষা করতে ইন্দ্রের পুত্র জয়ন্ত পাত্রটি নিয়ে পালিয়ে যায়। তার সঙ্গে ছিল সূর্য, চন্দ্র, বৃহস্পতি, এবং শনি। তাঁদের প্রত্যেকের কাছে ছিল নির্দিষ্ট দায়িত্ব: সূর্যকে অমৃত পাত্র ভাঙা থেকে রক্ষা করতে, চন্দ্রকে অমৃত পাত্রের নিচে থেকে তার ফোঁটা পড়ে না যাওয়ার জন্য সতর্ক থাকতে, বৃহস্পতিকে অসুরদের রুখে রাখতে এবং শনি-কে জয়ন্তের প্রতি নজর রাখতে বলা হয়েছিল।
কিন্তু, চন্দ্র দেবতার ভুলের কারণে অমৃতের কিছু ফোঁটা পৃথিবীতে পড়ে যায়। এই ফোঁটাগুলি পড়েছিল প্রয়াগরাজ, হারিদ্বার, নাশিক এবং উজ্জয়ন-এ। তাই, এই স্থানগুলোকে পবিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়, এবং সেখানেই কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
কুম্ভ মেলা এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান
এছাড়া, কুম্ভ মেলা নির্দিষ্ট গ্রহের অবস্থান বা আলোচিত সেলেস্টিয়াল অ্যালাইনমেন্ট এর সাথে সম্পর্কিত। কুম্ভ মেলা প্রতি ১২ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়, যখন সূর্য, চন্দ্র, বৃহস্পতি, এবং শনি এক বিশেষ অবস্থানে অবস্থান করে। এই সেলেস্টিয়াল অ্যালাইনমেন্ট কুম্ভ মেলাকে পবিত্র করে তোলে।
উপসংহার: কুম্ভ মেলা এবং তার অসীম ঐতিহ্য
কুম্ভ মেলা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতি ১২ বছরে একবার এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভক্তরা, সাধুরা, এবং তীর্থযাত্রীরা একত্রিত হয়ে পবিত্র স্নান করেন। কুম্ভ মেলার পৌরাণিক উত্থান এবং চন্দ্র দেবতার ভুল কুম্ভ মেলাকে আরও এক অনন্য ঐতিহ্যে পরিণত করেছে, যা সারা বিশ্বের মানুষকে আকৃষ্ট করে।