২০২৫ সালের মহা কুম্ভ মেলা প্রয়াগরাজে শুরু হতে চলেছে এক বিশাল আয়োজনে, যেখানে শুধু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানই নয়, ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও এক অনন্যভাবে প্রদর্শিত হবে। এই বছর কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণ করবে বিভিন্ন প্রখ্যাত শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো, যারা তাদের সঙ্গীত এবং নাটকীয় পরিবেশনার মাধ্যমে মেলার জাঁকজমক আরও বাড়িয়ে তুলবেন। ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা এই মহাকুম্ভ মেলা ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে, যেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্ত এবং দর্শকরা উপস্থিত থাকবেন।
কালাগ্রাম: এক সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন
মহা কুম্ভ ২০২৫ মেলায় অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে উঠে এসেছে ‘কালাগ্রাম’ নামক একটি নতুন সাংস্কৃতিক স্থান, যা প্রয়াগরাজের কুম্ভ মেলা এলাকার মধ্যে অবস্থিত। এটি ৪,০০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যেখানে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্প, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে একত্রিত করে একটি প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। কালাগ্রামের উদ্বোধন করেছেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে পরিচিত হবে, যেখানে দর্শকরা ভারতের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে একসঙ্গে উপভোগ করতে পারবেন।
কালাগ্রাম জায়গাটিতে থাকছে সাতটি ‘সংস্কৃতি আঙ্গন’, যেখানে ভারতের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প এবং শিল্পকলা প্রদর্শিত হবে। এটি একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা তৈরি করবে, যেখানে ভক্ত এবং পর্যটকরা ভারতীয় সঙ্গীত, নৃত্য, শিল্পকলা এবং হস্তশিল্পের এক অভূতপূর্ব সম্মিলন উপভোগ করবেন।
শীর্ষস্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা
মহা কুম্ভ ২০২৫ মেলার সাংস্কৃতিক অংশে অংশগ্রহণ করতে চলেছেন শঙ্কর মাহাদেবন, কৈলাশ খের, হান্স রাজ হান্স, মোহিত চৌহান, হরিহরণ, কবিতা কৃষ্ণমূর্তী এবং আরও অনেক খ্যাতনামা শিল্পী। এই বিশাল আয়োজনের অংশ হিসেবে তারা ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, ভজন, ফোক সঙ্গীত এবং আধুনিক সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা পরিবেশন করবেন।
কালাগ্রামে স্থাপন করা হয়েছে বিশাল ১০,০০০ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গঙ্গা প্যান্ডেল, যেখানে দর্শকরা গঙ্গা অরতির মতো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া থাকবে আরও তিনটি বিশাল স্টেজ, যা বিভিন্ন অঞ্চলে দর্শকদের জন্য উপলব্ধ থাকবে। প্রখ্যাত শিল্পীদের এই পরিবেশনা সত্যিই দর্শকদের জন্য এক সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞান তৈরি করবে, যা কুম্ভ মেলার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মহাকুম্ভ আয়োজন
এই বছরের মহা কুম্ভ মেলা শুধু একটি ধর্মীয় জমায়েত নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক মহোৎসবেও পরিণত হবে। এখানে বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রদর্শনী এবং অনুষ্ঠানগুলোও থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় নাট্য বিদ্যালয় (NSD) এবং শ্রীরাম ভারতীয় কালাকেন্দ্র (SBKK) একাধিক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করবে, যা দর্শকদের সংস্কৃতির প্রতি আরও গভীর শ্রদ্ধা তৈরি করবে।
এছাড়া, প্রাচীন ঐতিহ্য এবং কুম্ভ মেলার ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য ‘অবিরল শাশ্বত কুম্ভ’ প্রদর্শনী এলাকায় দর্শকদের জন্য ইতিহাস, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে এবং ডিজিটাল প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে।
অন্যন্য আকর্ষণ: আকাশযাত্রা ও বই প্রদর্শনী
মহা কুম্ভ ২০২৫-এর আরেকটি আকর্ষণীয় আয়োজন হবে তারামণ্ডল সেশন, যেখানে দর্শকরা রাতের আকাশে তারাদের দেখে আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করবেন। এই আকাশযাত্রার মাধ্যমে দর্শকরা একে অপরকে কাছ থেকে দেখতে পাবেন আকাশের অসীম রহস্য। পাশাপাশি, সংস্কৃতি মন্ত্রক একটি বই প্রদর্শনী আয়োজন করবে, যেখানে সাহিত্যের অমূল্য রত্নগুলি প্রদর্শিত হবে।
শেষ কথা
মহা কুম্ভ ২০২৫ কেবল একটি ধর্মীয় জমায়েত নয়, বরং ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং শিল্পকলার এক সুবিশাল প্রদর্শনী হবে, যেখানে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, নৃত্য, ফোক সঙ্গীত এবং আধুনিক সঙ্গীতের মেলবন্ধন উপভোগ করা যাবে। কালাগ্রাম এই সাংস্কৃতিক উৎসবের কেন্দ্রস্থল হবে, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে আসা দর্শকরা ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক নতুন রূপ আবিষ্কার করবেন।