যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (Jadavpur University) দীর্ঘদিন ধরে র্যাগিংয়ের ঘটনাগুলির কারণে আলোচনায় এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলসহ বিভিন্ন জায়গায় র্যাগিংয়ের ঘটনা অত্যন্ত আলোচিত হয়ে থাকে, বিশেষ করে গত বছরের আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার পর। এই ঘটনার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং বন্ধ হয়নি এবং কিছু ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে। তবে, এবারের পদক্ষেপ আরও কঠোর, যেখানে র্যাগিংয়ে অভিযুক্তদের মার্কশিট আটকে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটির সদস্যরা এ ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন, যাতে র্যাগিংয়ে জড়িত ছাত্ররা ভবিষ্যতে কর্মজীবন বা চাকরির সুযোগে প্রতিবন্ধকতা অনুভব করে। এমনকি, কিছু ছাত্র ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে চাকরি পেয়েও গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের জন্য খতরনাক বলে মনে করা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, র্যাগিংয়ে জড়িত ছাত্রদের পরীক্ষার ফলাফল বা মার্কশিট আর দেওয়া হবে না। এটি র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এর ফলে নতুন চাকরির জন্য যোগদান প্রক্রিয়া ভীষণভাবে প্রভাবিত হবে, যা র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে একটা জোরালো বার্তা পাঠাবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে, যেসব ছাত্র র্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িত থাকেন, তারা শৃঙ্খলা রক্ষায় আরও সতর্ক হতে বাধ্য হবে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে দুঃসাহস কমবে এবং একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
তবে, ইতিমধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু ছাত্র র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত হওয়ার পর, কিছু শাস্তি পেয়েছেন। কয়েকজনকে শোকজের চিঠি দেওয়া হয়েছে, আবার কিছু ছাত্রকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার বা সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে, আদালতের হস্তক্ষেপের কারণে, কিছু ছাত্র এখনো ক্লাস করছেন এবং পরীক্ষা দিচ্ছেন।
এর পাশাপাশি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ে জড়িত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রের ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতে চাকরি পাওয়ার খবরও সামনে এসেছে। এতে র্যাগিংয়ের তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত ছাত্রকে পরীক্ষার মার্কশিট দেওয়া হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের র্যাগিংয়ের ঘটনায় মৃত্যুর মামলার শুনানি সোমবার আলিপুর কোর্টে পকসো বিশেষ আদালতে অনুষ্ঠিত হবে। এ ঘটনায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও পদক্ষেপগুলি শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই কঠোর পদক্ষেপগুলি বিভিন্ন মহলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আশা করছেন যে, এই সিদ্ধান্তটি তাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনবে এবং ক্যাম্পাসে এক নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করবে।