মেটা (Meta) এবং এর CEO মার্ক জুকারবার্গ সম্প্রতি একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন, যা ভারতের রাজনীতি এবং বিশ্বব্যাপী নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এই মন্তব্যের পর, ভারতীয় সংসদের পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটি মেটাকে তলব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান নিশিকান্ত দুবে বলেছেন, মেটা তাদের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।
মার্ক জুকারবার্গের বিতর্কিত মন্তব্য
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে The Joe Rogan Experience পডকাস্টে অংশগ্রহণকালে মার্ক জুকারবার্গ বলেন, “২০২৪ ছিল একটি বড় নির্বাচনী বছর, এবং অনেক দেশ, ভারতের মতো, যেখানে শাসক দলগুলি নির্বাচনে হারল।” তিনি দাবি করেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সাধারণ মানুষ শাসক দলগুলোর প্রতি আস্থা হারিয়েছে, যার ফলস্বরূপ ২০২৪ সালের বেশিরভাগ নির্বাচনে বর্তমান শাসক দলগুলো ক্ষমতা হারিয়েছে।
এই মন্তব্যটি ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নিশিকান্ত দুবে, যিনি ভারতীয় পার্লামেন্টের তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি কমিটির চেয়ারম্যান, তিনি এই মন্তব্যকে মিথ্যা তথ্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং মেটাকে তলব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি: আসল চিত্র
মার্ক জুকারবার্গের মন্তব্যের পর, ভারতের রেলমন্ত্রী এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আশ্বিনী বৈষ্ণব এই বক্তব্যকে ফ্যাক্টুয়ালি ইনকরেক্ট (factually incorrect) বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ভারতের জনগণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (NDA) কে পূর্ণ আস্থার সাথে নির্বাচিত করেছে।” তিনি আরও বলেন, “এটি হতাশাজনক যে মার্ক জুকারবার্গের মতো একজন বড় ব্যক্তিত্ব মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন।”
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন অনুযায়ী, ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) 240টি আসন পেয়েছে, যা 2019 সালের 303টি আসনের থেকে কম। তবে, জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (NDA) মিলে 292টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করেছে। তাই, জুকারবার্গের মন্তব্য বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, এমনটাই বলছেন ভারতীয় মন্ত্রীগণ।
মেটা এবং ফ্যাক্ট-চেকিং সিস্টেম
মেটা সম্প্রতি তাদের তৃতীয় পক্ষের ফ্যাক্ট-চেকিং সিস্টেম বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে এবং crowdsourced fact-checking সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে। এটি X (পূর্বে টুইটার) এর Community Notes এর মতো কাজ করবে, যেখানে ব্যবহারকারীরা একে অপরকে ভুল তথ্য সংশোধনে সহায়তা করবেন।
মেটার এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে মিথ্যা খবর ছড়ানো রোধে আরো কার্যকর ব্যবস্থা আশা করা হচ্ছে। তবে, ভারতীয় সংসদ মনে করে, যেহেতু মেটা একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম, তাদের বক্তব্যের ফলস্বরূপ বিশ্বব্যাপী ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে, তাই তাদের উচিত ক্ষমা চাওয়া।
ভারতীয় পার্লামেন্টের পদক্ষেপ
পার্লামেন্টারি কমিটি এখন মেটাকে তলব করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিশিকান্ত দুবে বলেছেন, “মেটার মিথ্যা তথ্য দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তারা এই ভুলের জন্য ভারতীয় সংসদ এবং জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হবে।”
এই ঘটনাটি আরও একবার প্রমাণ করে যে, সামাজিক মিডিয়া এবং এর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বরা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে ধরনের প্রভাব ফেলতে পারেন, তা অনেক বড় হতে পারে। এই ধরনের ভুল তথ্য মিথ্যাচারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
উপসংহার: মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে সংসদের দৃঢ় পদক্ষেপ
মেটা এবং মার্ক জুকারবার্গের মন্তব্যের বিরুদ্ধে ভারতের সংসদ দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। মিথ্যা তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকা এবং সত্যের প্রচার করা জরুরি, যাতে জনগণ সঠিক তথ্য পায় এবং কোন প্রকার বিভ্রান্তির শিকার না হয়।
এই মন্তব্যের পর, ভারতীয় সরকার এবং মন্ত্রীরা বার বার স্পষ্ট করেছেন যে ভারতের গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মিথ্যাচার সহ্য করা হবে না।