আজকের যুগে, মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রীনে চোখ গোঁজ করে থাকা প্রায় সবারই অভ্যাস। কিন্তু, এই দীর্ঘ সময় স্ক্রীন দেখার কারণে চোখে ‘আই ফ্যাটিগ’ বা ক্লান্তি হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়। এই সমস্যার সমাধানে অনেকেই আই ড্রপ ব্যবহার করে থাকেন। তবে, ভেতর থেকে চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য পুষ্টিবিদেরা বলছেন, আমলকি খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে আমলকির বিভিন্ন পুষ্টিগুণ চোখের ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে।
চোখের জন্য আমলকি কেন উপকারী?
১) ভিটামিন সি-এর শক্তি:
আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ২০২০ সালে ‘নিউট্রিয়েন্টস’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ভিটামিন সি শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, ফলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে চোখে যে ক্ষতি হয়, তা প্রতিরোধ করতে পারে। নিয়মিত আমলকি খেলে চোখের ক্ষতি কমে যায় এবং চোখের ক্লান্তি হ্রাস পায়।
২) অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান:
মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের স্ক্রীনে দীর্ঘ সময় কাজ করতে করতে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই সময় চোখে প্রদাহ, ড্রাই আইজ় এবং দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমলকিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা চোখের এই ধরনের প্রদাহজনিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে নিয়মিত আমলকি খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা।
৩) ভিটামিন এ-র উপকারিতা:
ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমলকিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে, যা নিয়মিত খেলে রাতকানা রোগের মতো চোখের গুরুতর সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। চোখের জন্য বিশেষ উপকারী এই ভিটামিনটি চোখের পিগমেন্ট তৈরি করতে সহায়ক, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৪) চোখের সংক্রমণ থেকে মুক্তি:
মরসুম বদলের সময় চোখে নানা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। আমলকি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানে সমৃদ্ধ, যা চোখের ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদে আমলকির রস খাওয়ার পাশাপাশি এটি চোখে ড্রপ হিসেবেও দেওয়া যায়, যা চোখের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৫) ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ:
চোখের বয়সজনিত সমস্যা ‘ম্যাকুলার ডিজেনারেশন’ একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। আমলকি ভিটামিন সি এবং পলিফেনলের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর, যা এই সমস্যার গতি স্লথ করে। নিয়মিত আমলকি খেলে বার্ধক্যের গতি কমে যায় এবং চোখের স্বাস্থ্য দীর্ঘকাল ভালো থাকে।
এছাড়াও, আমলকি সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে সাহায্য করে, যা সর্দি, জ্বর ও বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ছোটদের জন্যও এটি অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি তাদের শারীরিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি চোখেরও যত্ন নেয়।
তাহলে, দীর্ঘ সময় স্ক্রীনে কাজ করার পর আপনার চোখ ক্লান্ত হয়ে গেলে, আমলকি খেয়ে চোখের উপকারিতা বৃদ্ধি করতে পারেন। এটি চোখের ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতেও সাহায্য করবে।