ক্যানসারের ঝুঁকি এখন শুধু বয়স্কদের মধ্যে নয়, তরুণদের মধ্যেও ব্যাপকভাবে বাড়ছে। আগে মনে করা হতো, বয়স বাড়লে তবেই ক্যানসার হয়, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা ভিন্ন। ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষদের গড় বয়স বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন ক্যানসার নিয়ে বেঁচে আছেন ৩৫ বছরের নীচে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির জন্য মূলত জীবনযাত্রার অসংযম এবং খাদ্যাভ্যাস দায়ী।
কেন তরুণদের মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে?
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির একটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, তরুণদের মধ্যে ক্যানসার রোগের হার বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ হলো খাওয়ার অভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং পরিবেশগত প্রভাব। বিশেষ করে স্তন, ফুসফুস, মুখ, পাকস্থলী এবং বৃহদন্ত্রের ক্যানসারের রোগী বাড়ছে।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা জানান, যেসব মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ তরুণ বয়সী। এছাড়া গ্রামীণ এলাকা থেকে এই রোগের হার বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে, অনেক মহিলাই প্রথম সন্তান পৃথিবীতে আনার সময় অনেক দেরি করে থাকেন (৩৪-৩৫ বছর বয়সে)। এই প্রবণতাটি স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাছাড়া, বর্তমান সময়ে অনেক তরুণী স্তন্যপান করাতে আগ্রহী নয়, যা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি আরও বাড়ায়।
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসও ক্যানসারের একটি বড় কারণ
আজকাল, তরুণরা প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে বেশি ঝুঁকছে। এই ধরনের খাবারে রাসায়নিক পদার্থ এবং হরমোন থাকে, যা শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে দিতে পারে। এতে সময়ের আগেই ঋতুস্রাব শুরুর মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা পরবর্তীতে স্তন এবং জরায়ুমুখের ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ায়।
এছাড়া, মুখ ও গলার ক্যানসারও কমবয়সিদের মধ্যে বাড়ছে। তামাকজাত দ্রব্য, যেমন সিগারেট, বিড়ি, গুটখা, জর্দা খাওয়ার ফলে এই রোগের ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়। বেশ কিছু সময় পরে, এই রোগ ধীরে ধীরে ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জরায়ুমুখের ক্যানসার: মহামারী আকারে
জরায়ুমুখের ক্যানসার বর্তমানে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যান, তাঁদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের একজনের মৃত্যু হয় এই রোগের কারণে। অত্যধিক নেশার প্রয়োগ, ঋতুস্রাবের সময় পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং অপর্যাপ্ত যৌন স্বাস্থ্য সচেতনতা এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: ক্যানসার রোধের উপায়
ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর জন্য জীবনযাত্রায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে হবে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য দুটি মূল পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- প্রিভেনশন অঙ্কোলজি: ক্যানসারের জন্য দায়ী এমন অভ্যাস যেমন ধূমপান, তামাক খাওয়া, মদ্যপান থেকে দূরে থাকতে হবে এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে।
- আর্লি ডিটেকশন: নিয়মিত চেক-আপ করানো এবং পরিবারের ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
ক্যানসার রোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে মেটাবলিক সিনড্রোম হতে পারে, যা পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয় এবং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ফাইবার জাতীয় খাবার: সব রকমের জাঙ্ক ফুড এবং কৃত্রিম রং মেশানো খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। ফাইবার, দানাশস্য, বাদাম, বীজ, সবজি ও ফল বেশি করে খেতে হবে।
- নিয়মিত শরীরচর্চা: শরীরের সুস্থতার জন্য শরীরচর্চা অপরিহার্য।
- ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ: এগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- নির্দিষ্ট স্ক্রিনিং পরীক্ষা: ৩০ বছর বয়স পার হলে কিছু স্ক্রিনিং টেস্ট যেমন স্তন পরীক্ষা, ম্যামোগ্রাম, প্যাপ টেস্ট এবং পুরুষদের জন্য পিএসএ টেস্ট করানো জরুরি।