হার্টের সঙ্কোচন-প্রসারণের সময় এবং ছন্দের হেরফের একটি স্বাভাবিক ঘটনা, কিন্তু এর একটা সীমা থাকা উচিত। যখন এটি সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন এটি শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি বুক ধড়ফড় করা, চিনচিনে ব্যথা অনুভব করা এবং হৃৎস্পন্দনের অনিয়মিততা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তা গুরুতর সমস্যা হতে পারে।
বুক ধড়ফড় কেন হয়?
প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি মিনিটে ৭২ বার হতে পারে, যদিও এটি ব্যক্তিভেদে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। হার্টের সঙ্কোচন এবং প্রসারণের সময় যখন ছন্দের কোনো হেরফের হয়, তখন সেই পরিস্থিতিতে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পৌঁছাতে পারে না। এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যখন হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে যায়, একে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া’ (Cardiac Arrhythmia)।
কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া কি?
অ্যারিদমিয়া দুটি প্রধান ধরনের হতে পারে:
- ব্র্যাডিঅ্যারিদমিয়া – যেখানে হৃৎস্পন্দন কমে গিয়ে ৬০-এর নিচে চলে যায়। এর ফলে হার্টে ব্লক হতে পারে।
- ট্যাকিঅ্যারিদমিয়া – যেখানে হৃৎস্পন্দন ১০০ বা তার বেশি হয়, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
এই দুটি সমস্যা সাধারণত কোনো উপসর্গ ছাড়াও হতে পারে, তবে বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা এবং শোবার সময় অতিরিক্ত ঘাম হওয়া এর কিছু লক্ষণ হতে পারে।
কখন সতর্ক হবেন?
যদি আপনি সামান্য পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে যান, শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, শরীর কাঁপে, মাথা ঘোরায় বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়, তবে এগুলো উপেক্ষা না করাই ভালো। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একাধিক পরীক্ষা যেমন ইসিজি, হল্টার মনিটরিং, ইকোকার্ডিওগ্রাফি এবং কিছু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসক আপনার হৃৎস্পন্দনের সমস্যা শনাক্ত করতে পারবেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ
অরুণাংশু তালুকদার, একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, বলেন, “এমন অবস্থায় অনেক রোগী আমাদের কাছে আসেন। তাঁদের প্রথমেই ইসিজি করানো হয়। বুক ধড়ফড় করার সময় আতঙ্কিত না হয়ে, শান্ত হয়ে বসে ‘ডিপ ব্রিদিং’ করুন। এতে অনেক আরাম পাবেন।”
এই সময় বদ্ধ জায়গায় না থেকে খোলা জায়গায় হাঁটতে যাওয়াও ভালো। এছাড়া সিগারেট বা মদ্যপান একদম পরিহার করুন। স্নানের জন্য ঈষদুষ্ণ জল ব্যবহার করলে স্বস্তি মিলতে পারে, তবে মাথায় আগে জল না ঢেলে ধীরে ধীরে পা, হাত এবং গায়ে জল দিয়ে মাথায় ঢালুন।
কী করতে হবে?
- ভারী কাজ করবেন না। শারীরিক অস্বস্তি শুরু হলে, চুপ করে কিছু সময় শুয়ে বা বসে থাকুন।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অস্বস্তি অনুভব হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান।
- পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত।