কুম্ভমেলা, যেখানে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী গঙ্গাস্নান করতে আসেন, সেই মেলা প্রাঙ্গণে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে রবিবার বিকেলে। কুম্ভমেলার ১৯ নম্বর সেক্টরের গীতা প্রেসের তাঁবুতে ৪টা ৮ মিনিটে আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে একাধিক তাঁবুর মধ্যে, কিন্তু প্রশাসন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় মাত্র ২২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কিভাবে এমনটা সম্ভব হলো? এ বিষয়ে জানাচ্ছেন মেলা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ।
কুম্ভমেলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা
এবারের কুম্ভমেলায় প্রথমবারের মতো এত বড় সংখ্যক ক্যামেরা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। কুম্ভমেলা প্রাঙ্গণ এবং শহরজুড়ে মোট ৩০০০টিরও বেশি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৮০০টি ক্যামেরা চালিত হচ্ছে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে। এই ক্যামেরাগুলি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার সঠিক স্থান এবং পরিস্থিতি দ্রুত নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
পুলিশ সুপার এবং ইন্টিগ্রেটেড কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের (আইসিসিসি) ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক আইপিএস অমিত কুমার জানান, কুম্ভমেলা চত্বরে যে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা বা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি শনাক্ত করা মাত্রই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কতা পাঠানো হয়। যখন আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়, তখন একই সিস্টেমের মাধ্যমে তা সবার কাছে পৌঁছানো হয় এবং দ্রুত দমকল বাহিনীকে পাঠানো হয়। এতে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
আগুনের ঘটনা এবং দ্রুত নিয়ন্ত্রণ
রবিবার বিকেল ৪টা ৮ মিনিটে গীতা প্রেসের তাঁবুতে আগুন লাগার খবর আসে। সেখান থেকে পরিস্থিতি দ্রুত সমন্বয় করা হয়। কুম্ভমেলার প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনী অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা এবং পুণ্যার্থীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা শুরু করে। কুম্ভমেলার রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সাহায্যে পুণ্যার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই, সাত মিনিটের মধ্যে দমকল বাহিনী জল ট্যাঙ্ক নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারপর মাত্র ২২ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বড় ধরনের ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। আগুনের ঘটনায় কেউ আহত না হলেও, বেশ কিছু তাঁবু সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে এবং আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কয়েক কোটি টাকার মতো হতে পারে।
অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
এমন দুর্ঘটনার পর, পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা এবং অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে, তবে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে আরও সতর্কতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকার ও প্রশাসন এই ধরনের বড় আয়োজনে আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শেষ কথা
কুম্ভমেলা যেখানে বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী ভিড় করেন, সেখানে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার শুধু দুর্ঘটনা মোকাবিলা করতে সাহায্য করে না, বরং পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, ভবিষ্যতে আরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা অব্যাহত থাকবে।