---Advertisement---

ওজন কমানোর ওষুধের সুরক্ষা: কি আসছে ভারতের বাজারে এবং কতটা নিরাপদ?

---Advertisement---

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ওজন কমানোর ওষুধগুলির প্রতি আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে বিশেষত কিছু ওষুধ যেমন ওজেম্পিক, ওয়েগোভি, মাউনজেরো এবং জেপবাউন্ড ইত্যাদি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এই ওষুধগুলির নাম সমাজমাধ্যমে সেলিব্রিটিদের ব্যবহারের মাধ্যমে আরও জনপ্রিয় হয়েছে। বিশেষত ইলন মাস্ক ও অপরা উইনফ্রি এই ওষুধ ব্যবহার করে শারীরিক ভাবে পরিবর্তিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন, যা আরও বেশি মানুষকে আকর্ষিত করেছে। তবে, ভারতের বাজারে এই ওষুধগুলি আসলে কী প্রভাব ফেলবে এবং এসব ওষুধের নিরাপত্তা নিয়ে চিকিৎসকরা কী বলছেন, তা নিয়ে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

ওজন কমানোর ওষুধ কি নিরাপদ?

ওজন কমানোর জন্য ব্যবহৃত বেশিরভাগ ওষুধ সরাসরি খিদে কমানোর কাজ করে। এ ধরনের ওষুধে অনেক রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। বিশেষ করে যেসব ওষুধ সেমাগ্লুটাইড (যেমন ওজেম্পিক) বা অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে, তা কিছু রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। কলকাতার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও রিজেনারেটিভ মেডিসিনের চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, ওজেম্পিক এবং এ ধরনের ওষুধে কিডনির রোগ, হাইপারটেনশন, থাইরয়েড সমস্যা, ক্যানসার এবং অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। এর পাশাপাশি, অধিক মাত্রায় এই ওষুধ গ্রহণ করলে সাইড ইফেক্ট আরও বাড়তে পারে।

কীভাবে কাজ করে এই ওষুধগুলি?

ওজেম্পিক, ওয়েগোভি, মাউনজেরো, জেপবাউন্ডের মতো ওষুধগুলি মূলত স্থূলতার চিকিৎসা এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তবে এদের কার্যকারিতা শুধুমাত্র কিলোর দিকেই সীমাবদ্ধ থাকে না, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও শর্করা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, এ ধরনের ওষুধ সাধারণত কেবল তখনই দেওয়া হয়, যখন রোগীর ওজন অত্যধিক বেড়ে যায় এবং তাদের মধ্যে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়।

এছাড়া, এসব ওষুধ ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট ডোজ মেনে চলা আবশ্যক। ডোজে ভুল হলে বা নিয়মিত ব্যবহারে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এসব ওষুধ গ্রহণ করলে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। নিউক্লিয়ার মেডিসিনের চিকিৎসক সোনালি ঘোষ জানান, “তারা যারা সেলিব্রিটি হিসেবে এই ওষুধ ব্যবহার করে ওজন কমিয়েছেন, তাদের শরীরের অন্য খাতে সুষম ডায়েট ও শরীরচর্চার সাথে এসব ওষুধের প্রভাব কাজ করেছে। তবে সাধারণ মানুষ যদি এসব ওষুধ ব্যবহারে মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, তাহলে বিপদ হতে পারে।”

ভারতের বাজারে কী প্রভাব পড়বে?

প্রযুক্তি এবং সামাজিক মাধ্যমের বিপুল প্রভাবের কারণে, এমন ওজন কমানোর ওষুধ ভারতের বাজারেও সহজলভ্য হয়ে উঠতে পারে। তবে, বাজারে এসব ওষুধ চলে এলে সাধারণ জনগণের মধ্যে অসচেতনভাবে এর ব্যবহার শুরু হতে পারে, যার ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা এবং চিকিৎসা পরামর্শ অনেকের কাছে সহজলভ্য নয়, সেখানে ব্যবসায়িক স্বার্থে অধিক পরিমাণে বিক্রি শুরু হলে, মানুষের উপর তার কী প্রভাব পড়বে তা একেবারে অনিশ্চিত। যেমন, এসব ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার ক্যানসার বা হার্টের সমস্যা বাড়াতে পারে।

এছাড়া, ভারতীয় বাজারে এই ধরনের উচ্চমূল্যের ওষুধ অনেকেরই নাগালের বাইরে থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ওজেম্পিকের একটি ইনজেকশনের দাম প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা, যা সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় আঘাত হতে পারে। তাছাড়া, যদি এসব ওষুধ সঠিক ট্রায়াল ছাড়াই বাজারে আসে, তবে তা সবার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ডাক্তারদের পরামর্শ

চিকিৎসকেরা এই বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন: পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলা সবচেয়ে ভালো উপায় ওজন কমানোর জন্য। কোনো ধরনের ওষুধ না নিয়েও, সঠিক নিয়ম মেনে চললে ওজন কমানো সম্ভব। একমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে, যখন অন্য সব উপায় ফল দেয় না, তখন এসব ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।

অতএব, ওজন কমানোর জন্য ওষুধ গ্রহণের আগে সঠিক জ্ঞান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সমাজে ওষুধগুলি জনপ্রিয় হলেও, এসবের সাইড ইফেক্টের বিষয়টি উপেক্ষা করা উচিত নয়।

Join WhatsApp

Join Now
---Advertisement---

Leave a Comment

Read all the Breaking News Live on indiatvnews.com and Get Latest English News & Updates from Education and Higher Studies Section