সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে গিয়ে দেখলেন মাড়ি থেকে রক্তপাত হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। মাড়ি থেকে রক্তপাত হলে বুঝতে হবে মাড়িতে জিনজিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ হয়েছে। দাঁত ব্রাশ করার সময় যদি মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হয়, তবে প্রথমেই দন্ত চিকিৎসকের কাছে গেলে সহজে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে।
রক্তপাত হওয়ার কারণ
আমরা অনেক সময় দিনে দু’বার দাঁত ব্রাশ করি না। আবার খাবার খাওয়ার পর ঠিকঠাক মুখ ধুই না। যার কারণে দাঁতের মাড়িতে ব্যাকটেরিয়া জমে নানা রকম জটিলতা তৈরি হতে পারে। বেশ কয়েকটা কারণে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। যেমন:
১. নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করলে দাঁতের ওপর জমে থাকা খাদ্যকণাগুলোর সাদা প্রলেপ পড়ে, যাকে আমরা ডেন্টাল প্লাক বলে। ২৪ ঘণ্টা পর এ ডেন্টাল প্লাক শক্ত হয়ে ক্যালকুলাস হয়। মাড়ি থেকে রক্তপাতের প্রথম কারণ হচ্ছে ক্যালকুলাস।
২. ক্যালকুলাস দাঁত ও মাড়ির মাঝখানে অবস্থান করে। প্রতিনিয়ত নরম মাড়ির সঙ্গে ক্যালকুলাসের ঘর্ষণে খুব সহজেই মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হয়। মাড়ির ফোলা এবং প্রদাহের কারণও এ ক্যালকুলাস। এটিকে বলা হয় জিনজিভাইটিস।
৩. জোরে জোরে দাঁত ব্রাশ করলে বা ঠিকমতো ফ্লসিং না করলে রক্তপাত হতে পারে।
৪. রক্তের নানা রোগ যেমন: হিমোফিলিয়া থেকে লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার, লিভারের সমস্যা, রক্ত জমাট বাঁধার উপাদানের তারতম্য, ডেঙ্গু, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে রক্তপাত হতে পারে।
৫. রক্ত পাতলাকারী ওষুধ, গর্ভাবস্থায় বা বিশেষ সময়ে হরমোনের তারতম্য, বিশেষ কিছু ভিটামিন যেমন ভিটামিন ‘সি’ ও ভিটামিন ‘কে’ এর ঘাটতির কারণেও রক্তপাত হতে পারে।
করণীয়
দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হলে অবশ্যই একজন দন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হলে দাঁতের স্কেলিং করাতে হবে। স্কেলিংয়ের পর সাধারণত আর রক্তপাত হয় না। এ ছাড়া ছয় মাস পর পর স্কেলিং করাতে হবে। স্কেলিং করলে দাঁতের মাড়ির ক্ষয় হয়, এমন ধারণা সঠিক নয়। কিছু নিয়ম মেনে চললে মাড়ি দিয়ে রক্তপাত কম হবে। যেমন:
১. প্রতিদিন সঠিক নিয়মে সকালে নাস্তার পর ও রাতে ঘুমানোর আগে ভালো মানের পেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে দু’বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
২. দীর্ঘদিন এক টুথব্রাশ ব্যবহার না করা ভালো।
READ MORE হৃদরোগ-ক্যানসার থেকে দূরে থাকতে যে যে সবজি খাবেন
৩. ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহারের মাধ্যমে দুই দাঁতের মাঝখানে লেগে থাকা খাদ্যকণা দূর করতে হবে।
৪. দাঁতের সুস্থতায় সুষম খাবারের বিষয়েও মনোযোগী হতে হবে। আঁশজাতীয় খাবার ও সবুজ শাকসবজি দাঁতের জন্য ভালো।
৫. নিয়মিত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। আমলকী, কমলালেবু, বাতাবিলেবু, লেবু, আমড়া ইত্যাদি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে।