রাজারহাটের নারায়ণপুর এলাকার একটি বহুতল আবাসন থেকে উদ্ধার হল স্বামী ও স্ত্রীর মৃতদেহ। স্ত্রী রূপা মুখার্জি গলাকাটা অবস্থায় পড়েছিলেন মেঝেতে। ঘর থেকেই উদ্ধার হয় গৃহকর্তা সাগর মুখার্জির ঝুলন্ত দেহ। রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে দম্পতির কিশোরী কন্যাকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সে। তাকেও গলাকাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। শনিবার দুপুরে নারায়ণপুরে বিদ্যাসাগর মাতৃসদন ও হাসপাতাল লাগোয়া বহুতল আবাসনের একতলার একটি ফ্ল্যাটে ঘটেছে এই ঘটনা। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে নিজের গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন স্বামী।
আত্মহত্যার আগে মেয়েকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ফ্ল্যাট থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত হয়েছে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র ও আত্মহত্যার দড়ি। বিধাননগর কমিশনারেটের নগরপাল গৌরব শর্মা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে, আর্থিক কারণে হয়তো এই ঘটনা ঘটেছে। একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। কিছু দেনা আছে তাঁদের। দম্পতির কন্যা এখন কথা বলার অবস্থায় নেই, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সে সুস্থহলে এনিয়ে আরও বিশদ তথ্য পাওয়া যাবে। দম্পতির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ঘর থেকে যে-সব নথি উদ্ধার হয়েছে সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, সেখান থেকে হয়তো আরও তথ্য পাওয়া যাবে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ফোন। মৃত দম্পতি ও পরিবারের লোকেদের যাদের সঙ্গে মেলামেশা ছিল ও পেশার কারণে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার পিছনে ঠিক কী কারণ রয়েছে, জানার চেষ্টা চলছে।’
READ MORE তিন করোনা রোগী ভর্তি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত বছর পঞ্চাশের সাগর মুখার্জি ওষুধ ব্যবসায়ী। ওষুধের দোকান আছে তাঁর। এলাকায় সকলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল পরিবারের। এদিন সকালে একবার বাড়ির বাইরে বেরোতে দেখা গিয়েছিল সাগরবাবুকে। পরে তিনি বাড়িতে ঢুকে যান। দুপুরে দোকানের এক কর্মচারী ফোন করেন তাঁকে। বারবার ফোন করেও কোনও সাড়া না মিললে তিনি এক প্রতিবেশীকে সাগরবাবুকে ডেকে দিতে বলেন। তিনি ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে ভিতর থেকে গোঙানির আওয়াজ পান।
ততক্ষণে সেখানে জড়ো হয়েছেন অন্য প্রতিবেশী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। দরজায় ধাক্কাধাক্কি করায় কোনওভাবে রক্তাক্ত অবস্থায় ভিতর থেকে ঘরের দরজা খুলে দেয় সাগরবাবুর কিশোরী মেয়ে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে। গলায় আঘাতের চিহ্ন। ঘরে ঢুকে প্রতিবেশীরা দেখেন, মেঝেয় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বছর বিয়াল্লিশের রূপা। পাশে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছেন সাগর। খবর দেওয়া হয় নারায়ণপুর থানায়। তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা সাগর ও রূপাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় বিধায়ক তাপস চ্যাটার্জি, বিধাননগরের নগরপাল গৌরব শর্মা ও কমিশনারেটের কর্তারা। প্রতিবেশীরা জানান, ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন ওষুধ ব্যবসায়ী। দেনা মেটাতে না পেরে স্ত্রী ও মেয়ের গলায় কোপ মেরে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে ধারণা প্রতিবেশীদের।